ঢাকাসোমবার , ১২ মে ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জনপ্রিয় সংবাদ
  9. জাতীয়
  10. বিনোদন
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দেবদাস নাটকের জমিদার মহেন্দ্র বাবু এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
মে ১২, ২০২৫ ৬:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী:

এখন আর পার্বতীর সংবাদ লইতে ইচ্ছা করে না।তবে দেবদাসের জন্য বড়ই করুনা অনুভব হয়। এই কথাগুলো লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের প্রতাপশালী লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে
দেবদাস নাটকের প্রভাবশালী জমিদার মহেন্দ্র বাবু’র ভূমিকায় অভিনয় করতেন শ্রী তারাপদ কর্মকার। তিনি এখন নিজ বাড়িতে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। খোঁজ রাখেন না যাত্রা অভিনেতাকে একসময়ের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার শিল্পী অগ্রগামী অপেরার যাত্রাশিল্পের বিশেষ শিল্পী হিসাবে অভিনয় করতেন এই তারাপদ কর্মকার। মঞ্চ কাপানো এই শিল্পী যাত্রাপালা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক দেবদাস যাত্রাপালায় জমিদার মহেন্দ্র বাবুর চরিত্রে অভিনয় করতেন। অভিনয়ের মধ্যে বলে উঠতেন একের পর এক সংলাপ। যাত্রা শিল্পে অসংখ্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন উপমহাদেশের এই শ্রেষ্ঠ যাত্রাভিনেতা।

জমিদার মহেন্দ্র বাবুর চরিত্রে অভিনয় করতেন অভিনয় করে প্রচুর সুনাম অর্জন করেছিলেন এই উপমহাদেশে।

শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা উপন্যাস অবলম্বনে “দেবদাস” নাটকের খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সত্যিকারের জমিদার হয়ে মহেন্দ্র বাবু
পার্বতীকে বিয়ে করে মহা আনন্দে ঘর সংসার করতে লাগলেন। এদিকে প্রেমে ব্যার্থ দেবদাস কলকাতার এক বাইজিপাড়ায় জীবনের শেষ মুহূর্তটুকুর জন্য মনের দুঃখে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।

কাল জয়ী সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের দেবদাস নাটকের খলনায়ক মহেন্দ্র বাবুর চরিত্রে মঞ্চ কাঁপানো অভিনেতা তারাপদ কর্মকার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রোগ শোকে চরাজীর্ণ অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে নিজ গৃহে পাঞ্জা লড়ছেন। তিনি ১৯৫২ সালে তৎকালিন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার মোষেরপোল গ্রামের ডাক্তার গুরুদাস কর্মকারের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে তার ছোট কাকা নকুল কর্মকারের হাত ধরে যাত্রা জগতে প্রবেশ করেন খলনায়ক তারাপদ কর্মকার।
শৈল্পিক মন-মানসিকতা নিয়েই সেই যুবকটি এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ভোলানাথ অপেরায় সম্রাট শের শাহ্ নাটকে খলনায়ক হিসাবে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম অভিনয় জগৎ শুরু করেন।
যাত্রাপালায় অভিনয়ের মাধ্যম দিয়ে তিনি মানুষের কাছে প্রশংসায় উদ্ভাসিত হয়ে যাত্রা জগতে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন।

এরপর একে কাজ করেন নট্ট কোম্পানি, শিল্পী তীর্থ, ভারতী অপেরা, বাসন্তি অপেরা, গণবাণী, ভৈরব অপেরা, মুক্তধারা, অগ্রগামী। তাঁর বিখ্যাত যাত্রা পালা দেবদাস, গুলি হলো মানুষের অধিকার, ধনরাজ তামাং, বিদ্যাসুন্দর, মহাজনের মেয়ে, বণিক বাড়ির বৌ, কুমারী মা, কলসি কাখে কুলের বধু, কলকাতার বৌদি, বড় দিদি, বৌমা তোমার পায়ে নমস্কার, থানায় যাচ্ছে ছোটো বৌ, শেষ সাক্ষী দুর্গা, কবরে কাদছে আনারকলি, বৃদ্ধাশ্রমে কাদছে বাবা মা ইত্যাদী। তিনি যাত্রাভিনয়ে খ্যাতির সাথে সাথে পেয়েছেন বেশ কিছু পুরস্কার।

এই খ্যাতিনামা যাত্রা শিল্পী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, যাত্রাশিল্পে অভিনয় করে মানুষের প্রশংসা অর্জন করলে আমার নিজের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাত্রাপালা করে মানুষের মনে বিনোদন দিয়েছি। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজ জীবনেই বিনোদনের রেষমাত্র নেই। রোগাক্রান্ত হয়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। একটু ভালো চিকিৎসার জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসকসহ বেশকিছু অফিসে আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত কোন সহযোগিতা পাইনি। সেই দিনের মহেন্দ্র বাবুর খোঁজ এখন আর কেউ রাখে না।