মোঃ জাবেদ আহমেদ জীবন
ব্রাহ্মণবাড়ীয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগর পৌরসভার
নবীনগরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (DPHE) অধীনে ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন একটি ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘আড়াই কোটি টাকা উধাও’ অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় চলছে।
তবে প্রকৃত তথ্য বলছে, এই অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার রয়েছে বড় ধরনের অমিল।
সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, নবীনগর পৌরসভার সেই বহুল আলোচিত প্রকল্পটি দুর্নীতির বড় উদাহরণে পরিণত হয়েছে এবং পাইপের ছিদ্র দিয়ে যেন আড়াই কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন শিরোনামে বিষয়টি প্রচার হলে পৌর এলাকায় শুরু হয় নানা গুঞ্জন।
এরপরই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা।
তথ্য যাচাইয়ে জানা যায়, প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা ফিলিপাইন-ভিত্তিক ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (DPHE)। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০% কাজ সম্পন্ন হলেও, ঠিকাদার এখন পর্যন্ত কেবল ৩০% বিল উত্তোলন করতে পেরেছেন।
জেলার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এখন শুধুমাত্র মিটার সংযোজনের কাজ বাকী রয়েছে, যা জুন মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। পুরো অর্থের কোনো অংশই গায়েব হয়নি, এমনকি দুর্নীতির সুযোগও নেই। কাজের অগ্রগতি, বিল উত্তোলনের পরিমাণ ও তদারকি প্রক্রিয়াও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
প্রকল্পটি ২০২১ সালে এক বছরের মেয়াদে শুরু হলেও কাজ এখনও শেষ হয়নি কেন— এ প্রশ্নে তিনি জানান, গত বছরের আগস্ট থেকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে প্রায় ৯ মাস কাজ বন্ধ ছিল। তবে বর্তমানে ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা মাঠে আসছেন এবং আবার কাজ শুরু হচ্ছে।
অন্যদিকে পৌরবাসির অভিযোগ, পাইপলাইন বসানো হলেও এখনো ঘরে পানি পৌঁছায়নি।
ফলে নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে। তারা দ্রুত প্রকল্প সম্পন্ন করে নিরাপদ ও আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
নবীনগর পৌর এলাকার প্রায় ৭০ হাজার মানুষের প্রত্যাশিত এই প্রকল্প নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, প্রকল্পের পুরো অর্থ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় অর্থ আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হোক, আমরাও সেটাই চাই।
এদিকে পৌরবাসির পক্ষে অনেকেই প্রকল্পে ধীরগতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি সত্যিই কোনো গাফিলতি বা দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুত এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করে আমাদের নিরাপদ পানি সরবরাহ দিতে হবে।