মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
রাজবাড়ী সদর উপজেলার রাজাপুরে শাহীন শেখ ওরফে রুপল শেখ (২৭) নামে এক ভ্যান চালককে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যা করে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাব্বির হোসেনের উপর হামলার ঘটনায় মোঃ মনির হোসেন মোল্লা ওরফে বড় মনির ও মোঃ মোসলেম মোল্লা নামে ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার (১৯ মে) সকালে তাদেরকে রাজবাড়ী আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত রবিবার (১৮ মে) রাজবাড়ী সদর থানায় কর্মরত এসআই সাব্বির হোসেন, এএসআই শেখ আবুল হাসেম রাজবাড়ী সদর থানার রুপল হত্যা মামলার তদন্ত কাজে অবস্থান করছিল। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামীদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে মামলার বাদী পক্ষের লোকজন রাজাপুর মধ্যপাড়া গ্রামে মানববন্ধন আয়োজন করে। মানববন্ধন চলাকালে আকস্মিকভাবে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে কিছু লোক আসামীদের বাড়ি-ঘরে ভাংচুর শুরু করলে এসআই সাব্বির হোসেন এবং এএসআই শেখ আবুল হাশেম ভাংচুরকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন। ওই সময় উত্তেজিত লোকজন মোঃ মোক্তার বিশ্বাসের বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার উপর এসআই সাব্বির হোসেন ও তার সাথে থাকা এএসআই শেখ আবুল হাশেমের উপর আক্রমণ করে। এতে এসআই সাব্বির হোসেনের মাথা ফাটা রক্তাক্ত গুরুতর জখম হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সহ ঘটনাস্থল থেকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে এসআই সাব্বির হোসেন বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে সোমবার (১৯ মে) রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার অভিযান চলমান রয়েছে। এলাকায় পুলিশ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
এলাকার কয়েকজন বলেন, হত্যা মামলার প্রকৃত আসামীরা এখনো ধরা পড়েনি। সাদা পোশাকে ২জন পুলিশ আসামীর বাড়ীতে অবস্থান করছিল। মিছিল নিয়ে গেলে তারা সড়কের উপর এসে ধমক দেয়, মিছিল নিয়ে এদিকে কেন। তখন উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপর হামলা করে। এদিকে পুলিশের উপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছে গ্রামবাসী। আমরা সুষ্টু তদন্ত পুর্বক বিচার দাবী করছি।
নিহত রুপলের বাবা জিন্নাহ শেখ বলেন, মামলায় প্রকৃত আসামীদের বাদ দিয়ে এলাকার ৪ জন নিরিহ ও আমাদের পক্ষের লোককে ধরে হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার দাবী জানাচ্ছি। নিরিহদের মুক্তি দাবী করছি। সকল আসামীদের মামলায় নাম দেওয়া হয়নি। আমাদের সারা রাত থানায় রেখে পুলিশ তাদের ইচ্ছা মতো মামলা নিয়েছে। দ্রুত মামলার আসামীদের পরিবর্তনের দাবী জানাই।
রুপলের মা রাবেয়া বেগম বলেন, আমার সামনে ছেলেকে ওরা ধরে নিয়ে নির্যাতন করে মেরেছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই। আমার ছেলেকে বাঁচাতে যাদের পাঠালাম, তাদেরকেই মামলায় আসামী করে গ্রেপ্তার করেছে। আমি তাদের মুক্তি ও অপরাধীদের শাস্তির দাবী জানাই।
রুপলের মামা ও মামলার বাদী মোঃ কালাম মোল্লা বলেন, আমাকে পুলিশ রাতে ডেকে নিয়ে যায়। সারা রাত থানায় রাখে। আমার কাছে না শুনেই তাদের ইচ্ছামতো আসামীদের নাম দিয়েছে। পরে দেখি আমাদের পক্ষের ৪জনকে ধরে চালান দিয়েছে। আর প্রকৃত আসামী একজনও ধরা পড়েনি।
রুপলের বোন স্মৃতি ও বীথি বলেন, রাজাপুর গ্রামের প্রবাসী রাকিবুলের স্ত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণ ও মোটর চুরির অপবাদ দিয়ে গত মঙ্গলবার রাকিবুলের ভাই রাফিজুল ও তার পরিবারের লোকজন রুপলকে মারধর করেন। সেদিন মার খেয়ে রুপল বুধবার সকালে ঢাকা চলে যায়। স্থানীয় মাতবররা শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিবারের সদস্যরা তাকে ফোন করে বাড়ি আনেন। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে রুপলকে বসত বাড়ীর ঘরের ভেতর থেকে ধরে নিয়ে তাদের বাড়ীতে আটকে রাখে। তারা পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার ভাইয়ের ভিডিও করা ফোন ছিল না। ও বাটন ফোন চালাতো, তাহলে ভিডিও কিভাবে করলো। আমরা ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার দাবী করছি।
রাকিবুলের মা রাহেলা পারভীন বলেন, গৃহবধুর ভিডিও ধারণ ও মোটর চুরির কথা স্বীকার করে। তাই তাকে বাড়ী থেকে ধরে এনে মারধর করে। এসময় ৩০-৩৫জন যুবক ছিল। আসলে সবাই মিলে মারধর করে। এ কারণে হয়তো মারা গেছে। কারা ছিল না প্রকাশ করেন না। তবে ঘরে আটকে নয় বাইরে মারধর করে এবং অসুস্থ হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ডেকে এনে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী গৃহবধু বলেন, স্বামী বাড়ীতে না থাকায় আমার জানালায় টোকা দেওয়া, গোসলের ভিডিও ধারণ, মোটর চুরি করাসহ নানা ভাবে উত্যক্ত করছিল। তবে ভিডিও ধারণ করার পর তিনি সে ভিডিও দেখেননি বলেও প্রকাশ করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ গত শনিবার ভোরে রাজবাড়ী থানা পুলিশের অভিযানে সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের রুকমান বিশ্বাসের ছেলে মোঃ জহিরুদ্দিন বিশ্বাস (৬৫), মৃত ফেলু বিশ্বাসের ছেলে মোঃ মৈজদ্দি বিশ্বাস (৫৫), ফরহাদ বিশ্বাস (৪৫), খালেক মোল্লার ছেলে মোঃ মুন্নু মোল্লা (৫০) কে গ্রেপ্তার করে। তারা কারাগারে রয়েছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, আহত এসআই সাব্বির হোসেন বাদী মামলা দায়ের করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।