মোঃ তুহিন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ)
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর বিলপাড়া গ্রামে কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি অর্থ বরাদ্দ থাকলেও কাজের সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। নামকাওয়াস্তে কাজ দেখিয়ে অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানালেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলার জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর বিলপাড়া গ্রামের বেলাল মাষ্টারের বাড়ি থেকে ফজলুর বাড়ি পর্যন্ত একটি কাঁচা রাস্তা মাটি ভরাটের মাধ্যমে নির্মাণের জন্য কাবিখা প্রকল্পে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটির সভাপতি করা হয় ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য মোসা. ঝরনা খাতুনকে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার কিছু স্থানে অল্প পরিমাণে মাটি ফেলা হয়েছে, কিন্তু সেটি এতটাই অপরিকল্পিতভাবে দেওয়া হয়েছে যে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার উপর পুকুরের পানি উঠে আসবে এবং রাস্তা তলিয়ে যাবে। কোথাও কোথাও রাস্তার পুরোনো উঁচু-নিচু অংশ যেমন ছিল, তেমনি রয়ে গেছে। নতুন কোনো কাজের চিহ্নই নেই। আবার কিছু স্থানে কেবলমাত্র ট্রাক্টরের মাধ্যমে ব্রেল্ড দিয়ে আচরিয়ে সমতা করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা প্রকৃত উন্নয়ন কাজ নয় বরং নামকাওয়াস্তে কার্যক্রম মাত্র।
দেখা যায়, রাস্তার প্রকৃত জমি এখনো বেদখল অবস্থায় আছে। রাস্তার দু’পাশের জমির মালিকরা বেড়া দিয়ে জায়গা দখল করে চাষাবাদ করছেন, ফলে রাস্তা প্রস্থ কমে গিয়ে তা এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় যানবাহন তো দূরের কথা, পায়ে হাঁটা পর্যন্ত সমস্যা হচ্ছে। আবাদি জমির মালিক রাস্তার জমি দখলে থাকার কথা স্বীকার করলেও সংরক্ষিত নারী সদস্য তা অস্বীকার করছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তার কাজ হয়নি বললেই চলে। যদি ঠিকভাবে কাজ হতো, তাহলে আমাদের চলাচলে অনেক সুবিধা হতো। কোথাও কোথাও একটু মাটি ফেলা হয়েছে। দুই লাখ টাকার বরাদ্দ কীভাবে ব্যয় হলো, তা আমরা জানি না। তাঁরা উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় মো. মমিন আলী বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলে রাস্তাটা ডুবে যায়। মাটি ভরাট করে ঠিক করার জন্য প্রকল্প দেওয়া হয় কিন্তু পাশ থেকে কিছু মাটি কেটে রেখে দিয়েছে। রাস্তার মধ্যে গর্ত গুলোও ভরাট করেনি। চলাচলের উপযোগি না হওয়াতে কৃষি ফসল ধান সবজি অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।’
ফাইজুদ্দিন ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘অল্প কিছু কাজ করেছে। যেভাবে কাজ করা হয়েছে, তাতে একটুখানি বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তা পানিতে ডুবে যাবে। আরেকজন আমিনুল ইসলাম বলেন, কিছু অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করেছে আর বাকি অংশ ট্রাক্টরের মাধ্যমে ব্রেল্ড দিয়ে আচরিয়ে সমান করেছে। ’
রাস্তার পাশের জমির মালিক সোহরাব আলী বলেন, ‘আমার দিকে রাস্তার জমি আছে, অন্য জমির মালিকেরাও রাস্তা দখল করে আছে। আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি, আমার জমিতে কলার গাছ আছে। গাছের কলা পুষ্ট হলেই কেটে রাস্তার জমি ছেড়ে দিবো।’
সংরক্ষিত নারী সদস্য মোসা. ঝরনা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রাস্তার জমি কেউ দখল করে রাখেনি। ওটা দুই লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ। চেয়ারম্যান আমাকে কাজ করিয়েছে, বিস্তারিত চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন বলে নিজের দায় এড়িয়ে যান।’
জামবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফাজ উদ্দিন পান্নু মিঞা বলেন, ‘এর আগে রাস্তাটা কেউ করতে পারেনি। আমি কষ্ট করে রাস্তার টা করলাম। ওটা নিয়ে ঝামেলা করিয়েন না।’
ভোলাহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ.দা.) মো. আব্দুল আলিমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।