রফিকুজ্জামান সিজার ,কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কোয়ার্টার ব্যবহারে জালিয়াতি ও ভাড়ার নামে ভুয়া জমাদানের মাধ্যমে কোটি টাকার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে হিসাবরক্ষক, সিনিয়র নার্স, অফিস সহকারীসহ অন্তত পাঁচজনের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাবরক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে পরিবারসহ কোয়ার্টারে বসবাস করছেন। অথচ তিনি মাসে মাত্র ৯১৮ টাকা ভাড়া সরকারি খাতে জমা দিচ্ছেন, যা ডরমিটরির একটি সিট দেখিয়ে বৈধ করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোয়ার্টারগুলোর বারান্দায় ঝুলছে বাসার কাপড়চোপড়, যা প্রমাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাসের বিষয়টি।
নিলুফা ইয়াসমিন প্রথমে দাবি করেন যে তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখালে তিনি আগের কর্মকর্তার দেয়া ভাড়ানির্ধারণের অজুহাত দেন। এরপর তিনি তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করতে চাপ দেন।
এদিকে সিনিয়র নার্স নাসরিন সুলতানা জানিয়েছেন, তিনি ৮ বছর ধরে পরিবার নিয়ে কোয়ার্টারে বসবাস করছেন এবং মাসে ৩৪৫০ টাকা ভাড়া দেন। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এটি অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
অফিস সহকারী রেজাউল হক বলেন, তিনি পরিবারের সঙ্গে ৮ মাস ধরে কোয়ার্টারে আছেন এবং কোনো ভাড়াই দিচ্ছেন না, কারণ তার ‘সোহেল স্যারের’ সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।এছাড়া সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান সোহেলের ভাতিজা কাজল হোসেন, যিনি বর্তমানে টিকা বিভাগে কর্মরত, তিনিও পরিবারসহ কোয়ার্টার ব্যবহার করছেন।এই ব্যাপারে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।
এদিকে কুষ্টিয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ কামাল হোসেন বলেন, “যদি এ ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এসব দুর্নীতি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তারা দ্রুত তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।