ঢাকাবুধবার , ৪ জুন ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জনপ্রিয় সংবাদ
  9. জাতীয়
  10. বিনোদন
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

*📰 রফিকুল আমীন: বিতর্কিত ব্যবসায়ী, মাইন্ড হ্যাকার না প্রতারক

শাপলা আক্তার
জুন ৪, ২০২৫ ৩:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জাহিদুল আলম :

একদিকে তার অনুগামীরা তাকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের জনক বলে শ্রদ্ধা করেন, আবার, বিপরীত চিত্রও রয়েছে—অনেকে তাকে প্রতারক, ধান্ধাবাজ, লম্পট বলেও সমালোচনা করেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কেউই নির্দিষ্ট করে তার ‘প্রতারণা’ বা ‘ধান্ধাবাজি’ ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
রফিকুল আমীন এমন একজন মানুষ, যাকে কথার মাধ্যমে আটকানো কঠিন। তিনি যুক্তি দিয়ে আপনাকে মূল প্রসঙ্গ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন কিংবা এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে আপনি মানসিকভাবে তার কথার চক্রে আটকে পড়েন। এক কথায়, তিনি মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝার দুর্দান্ত ক্ষমতা রাখেন।
২০০০ সালের শুরুর দিকে “ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড”-এর মাধ্যমে দেশজুড়ে একটি বিকল্প ব্যবসায়িক মডেলের সূচনা হয়। লাখো মানুষ এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হন। সেই প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ, বহু মানুষ আজও বিনিয়োগ হারিয়ে পথে পথে। অথচ রফিকুল আমীন এখনো বিভিন্ন নতুন প্রজেক্টের নামে অর্থ সংগ্রহ করে চলেছেন—জেলখানা থেকেই।
*প্রজেক্ট ও প্রতারণার ছক*
২০১৫ সালে শুরু হওয়া “কো-শেয়ার প্রজেক্ট”-এর মাধ্যমে তিনি ‘গ্ল্যাক্সি ওয়াইড মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।
অফার ছিল—১ লাখ টাকায় শেয়ার হোল্ডার, ৫ লাখ টাকায় ডিরেক্টরশিপ। ঘোষণা দেওয়া হয়, ২০১৭ সালে বিদেশ থেকে বড় অংকের ফান্ড আসবে এবং বান্দরবানে সামুদ্রিক মাছ চাষের প্রজেক্ট শুরু হবে, যার নাম “রি-সার্কুলেটিং অ্যাকোয়া কালচার সিস্টেম (RAS)”。
প্রজেক্টে সামুদ্রিক মাছ, পর্যটন, বার-বি-কিউ—সবকিছুই ছিল চোখধাঁধানো কল্পনায় মোড়া। এমনকি মাছের শরীরের ‘প্রেশার’ মাপার জন্য নিয়োগ পাবে ডাক্তার পর্যন্ত! কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও, বিনিয়োগকারীরা দেখেননি এক টুকরো ফান্ড বা একফোঁটা জল।
*প্রভাবিত হন কিভাবে?*
সাবেক বিনিয়োগকারী ও ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, রফিকুল আমীন এক অনন্য মানসিক কারিগর। তার কথা, ভঙ্গি ও যুক্তি এতটাই প্রভাবশালী যে মানুষ মুহূর্তেই আস্থা রাখে তার ওপর। যে কেউ যুক্তি নিয়ে কথা বলতে গেলে, তিনি তা ভেঙে ফেলে নতুন এক চিন্তার ঘূর্ণিপাকে তাকে বিভ্রান্ত করেন।
*রাজনৈতিক দল ও বিভ্রান্তি*
সাজার মেয়াদ শেষ করে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তির পর তিনি ‘আম জনগন পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা বলে তার পুরনো বিনিয়োগকারীদের নিয়োজিত করেন নতুন রূপে—কর্মী হিসেবে। ফলে বিনিয়োগ ফেরত চাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে পড়ে। অনেকেই তা বুঝে উঠতে পারেন না, আবার কেউ কেউ বাধ্য হন চুপ করে থাকতে।
*প্রশ্ন রয়ে যায়*
• রফিকুল আমীন কি শুধুই একজন উদ্যোক্তা যিনি প্রতিকূলতার শিকার?
• না কি তিনি তার মেধা ও মনস্তাত্ত্বিক দক্ষতা ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছেন?
বিশ্লেষকরা বলেন, “তার পরিকল্পনাগুলো শুরুতে বিপ্লবী মনে হলেও, সেগুলো বাস্তবায়নের পথ ছিল কেবল কথার ঘোরে। একাধিক প্রজেক্টে বিনিয়োগ তুলেও শেষ পর্যন্ত কোনো কংক্রিট ফলাফল দেখানো হয়নি।”
*শেষ কথা*
বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ইতিহাসে রফিকুল আমীনের নাম থাকবে—কিন্তু সেটা কীসের জন্য, তা সময়ই বলে দেবে। এখন শুধু প্রশ্ন, তার কাছে যারা টাকা দিয়েছিল, তারা কি কখনো ন্যায়বিচার পাবে? আর রাষ্ট্র কি এই ‘মাইন্ড হ্যাকার’কে মোকাবিলা করতে পারবে?