তরফদার মামুন, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার এক নিভৃত গ্রামে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী হত্যাকাণ্ড। মাত্র ১৫ বছর বয়সী স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর, ১৪ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের একটি ছড়ার ধারে পাওয়া যায় তার অর্ধগলিত লাশ। নির্মম এই ঘটনা এলাকায় সৃষ্টি করেছে তীব্র শোক ও ক্ষোভের পরিবেশ।
নিখোঁজ থেকে লাশ উদ্ধার:
গত ১২ জুন সকাল ৭টার দিকে নাফিসা নিজ গ্রাম সিংগুর থেকে প্রাইভেট পড়তে বের হয়। এরপর আর বাড়ি ফিরে আসেনি। উদ্বিগ্ন পরিবার কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।
১৪ জুন বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির পাশে ছড়ার ধারে দুর্গন্ধ পেয়ে খোঁজ শুরু করেন তার ভাই ও মামা। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পান একটি বিকৃত মরদেহ যা পরে শনাক্ত করা হয় নাফিসার হিসেবে।
খবর পেয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে।
আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য ও মৃত্যুর আলামত
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ তথ্য। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নাফিসাকে গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। গলায় আঘাতের চিহ্ন ও শ্বাসনালীর বাধাপ্রাপ্তি এর স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। পুলিশ সন্দেহ করছে, পূর্বপরিকল্পিত ও নির্মম কৌশলে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তৎপরতায় ১৮ ঘণ্টায় গ্রেফতার
দ্রুত তদন্তে নামে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয় সন্দেহভাজন ঘাতক প্রতিবেশী মোঃ জুনেল মিয়াকে (৩৯)।
বিশেষ দৃষ্টান্ত হলো, ঘটনার সময় পুলিশ যখন তদন্ত করছিল, তখন আসামি ঘটনাস্থলে নির্লিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণে তাকেই শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
তার দেখানো মতে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে উদ্ধার করা হয় ভিকটিমের ব্যবহৃত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি স্যান্ডেল যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন
তদন্তে বিশেষ পুলিশ টিম এবং জেলার কর্মরত সাংবাদিক বৃন্দ।
ঘটনার পরপরই তদন্তে নেতৃত্ব দেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ আজমল হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম আপসার ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। তারা একটি বিশেষ টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে তদন্ত কার্যক্রম চালান।
পুলিশের সাফল্যে জনমনে আস্থা
দ্রুত ও নির্ভুল তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার জেলা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এম,কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম- সেবা জানান।
অপরাধী যতই চতুর হোক না কেন, আইনের হাত থেকে কেউ রেহাই পায় না এই ঘটনাই তার প্রমাণ। জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ বিভাগ সদা তৎপর।
এলাকাজুড়ে শোক ও ক্ষোভ
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নাফিসার পরিবার, স্বজন এবং এলাকাবাসী দোষীর দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, শিশু ও নারীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
এই ঘটনায় জেলা পুলিশের সময়োচিত পদক্ষেপ এবং পেশাদার তদন্ত বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নতুন করে ফিরিয়ে এনেছে।
আত্মার মাগফিরাত কামনা
প্রেস ব্রিফিংয়ে সবাই মহান স্রষ্টার দরবারে প্রার্থনা করা হয় নাফিসা জান্নাত আনজুম-এর আত্মার মাগফিরাতের জন্য, তার পরিবারকে এই শোক সইবার শক্তি দিন।