মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মতিন বক্স। ১৬ জুন রাতে শহরের ওয়েস্টার্ন রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি ক্লাবের তালা ভেঙে দখলের হুমকি দেন—এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিক সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলার মূলধারার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নাম উল্লেখ না করে তিনি কটূক্তি করেন এবং প্রেসক্লাবকে ‘দখল’ করে অন্যদের বসানোর ঘোষণা দেন। তার এই বক্তব্য ভাইরাল হলে জেলার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমকর্মীরা একে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ বলে উল্লেখ করেন।
পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৭ জুন সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি জরুরি সভা করে। সভায় মতিন বক্সের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে সর্বসম্মতভাবে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং সাংবাদিক সমাজকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানানো হয়।
ঘটনার পর প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক বকশী ইকবাল আহমদ মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং: ৮৭৬) করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মতিন বক্স তার ফেসবুক আইডি এবং অন্যান্য মাধ্যমে এই উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়িয়েছেন, যা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও প্রেসক্লাবের সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, মতিন বক্স বা তার অনুসারীরা ভবিষ্যতে প্রেসক্লাবে হামলা চালাতে পারেন, এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগেও মতিন বক্সের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা কুরুচিপূর্ণ প্রচার, ফেসবুকে ছবি দিয়ে অপপ্রচার এবং সংবাদ প্রকাশের জেরে হুমকি-ধামকির অভিযোগ উঠেছিল। তিনি নিজের দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সাংবাদিক ও পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে নিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে চলেছেন বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন বলেন, “বিএনপি কখনোই স্বাধীন সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ করে না। সাংবাদিকরা যেন মুক্তভাবে কাজ করতে পারেন, সেটিই আমাদের অবস্থান। মতিন বক্সের বক্তব্য সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত, এর দায় দল বহন করবে না। বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, “প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে একটি জিডি দায়ের করা হয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও প্রেসক্লাবের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।