তরফদার মামুন মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে মৌলভীবাজারে সুমেল মিয়া শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশন হাতে নিয়েছে এক অনন্য মানবিক উদ্যোগ। এ বছর ঈদে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মোট ৪৫টি ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়, যার মধ্যে শ্যামরকোনা মধ্যপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন এতিমখানা ও মাদরাসার ১৬ জন ছাত্রের হাতে ইতিমধ্যেই উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে।
এই উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছিলো ঈদের প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র। উপহার গ্রহণের সময় ছাত্রদের চোখেমুখে ছিল ঈদের আনন্দের স্বাভাবিক ঝলক। একজন সাধারণ ছাত্রের মুখেও হাসি ফোটানোর মাঝেই এই ফাউন্ডেশন খুঁজে নেয় ঈদের প্রকৃত আনন্দ।
মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে সামাজিক উদ্যোগ
বাকি উপহারসামগ্রীগুলো ফাউন্ডেশনের কিছু সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল – সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া, বিশেষ করে তাদের সঙ্গে যারা সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে। পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সদস্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ফাউন্ডেশনের মালিক সুমেল মিয়াকে।
তাঁর ব্যক্তিগত উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রতিবছর তিনি বরাদ্দ করেন অসহায়, দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে। এ কাজের মাধ্যমে তিনি সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধকে তুলে ধরেন।
দুর্যোগকালেও পাশে ছিল ফাউন্ডেশন
শুধু উৎসবের সময় নয়, বরং দুর্যোগমুহূর্তেও ফাউন্ডেশন বরাবরই মানবিক সহায়তায় সক্রিয় থেকেছে। মৌলভীবাজারে যখন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী অসহায় পরিবারদের মধ্যে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার ও ভারী খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হয়।
শিক্ষায় ফাউন্ডেশনের অগ্রণী ভূমিকা
ফাউন্ডেশনের নামেই রয়েছে ‘শিক্ষা সেবা’। এই শব্দ দুটি শুধু প্রতীকী নয় – বাস্তবেই এই ফাউন্ডেশন নিয়মিতভাবে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে থাকে। বই, খাতা, স্কুল ফিস, পোশাক – এসবের ব্যবস্থা করে থাকে প্রয়োজন অনুযায়ী।
স্থানীয় বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী, যারা অর্থাভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছিল না, তারা এই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এখন নিয়মিত পড়াশোনা করছে।
স্থানীয়দের প্রশংসা ও প্রত্যাশা
গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক সমাজ – সবাই এই ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ডকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখেন। স্থানীয় একজন শিক্ষক বলেন,
“এই ফাউন্ডেশন যেভাবে মানবতার কাজ করে চলেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কোনো প্রচারের প্রয়োজন ছাড়াই নিরবে এত ভালো কাজ করা – এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।”
ফাউন্ডেশনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে –
মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার
এতিম শিশুদের জন্য স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা
মানবিকতার নিরব সৈনিক
সুমেল মিয়া নিজে প্রচার বিমুখ, তাই তাঁর অবদান কখনো আলোচনায় আসে না। কিন্তু স্থানীয়রা জানেন, সমাজের যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে তিনি সবার আগে পাশে দাঁড়ান। এই সমাজে যখন অনেকেই শুধুমাত্র নিজের জন্য বাঁচে, তখন তাঁর মতো কিছু মানুষ সমাজের জন্য বেঁচে থাকেন।
ফাউন্ডেশনের সদস্যদের ভাষায়,
“এই সব কাজের পেছনে কোনো চমক নেই – আছে কেবল আন্তরিকতা, ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ। আর এসবই আমাদের চালিয়ে নিয়ে যায়।”
সুমেল মিয়া শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজারের মানুষের কাছে শুধু একটি ফাউন্ডেশনের নাম নয়, এটি এখন আস্থা, ভালোবাসা ও মানবিকতার প্রতীক। সমাজে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও অবহেলার মধ্যেও এই ফাউন্ডেশনের এমন কর্মকাণ্ড আশার আলো দেখায়।
এই প্রতিষ্ঠান আমাদের মনে করিয়ে দেয় – একজন মানুষের সদিচ্ছা ও উদ্যোগ কিভাবে সমাজের অসংখ্য মানুষকে উপকৃত করতে পারে।এই খবরের মধ্য দিয়ে যারা এধরনের ভালো কাজে এগিয়ে আসতে চান, তাদের জন্যও এটি হতে পারে এক বড় প্রেরণা।