গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিনিধি :
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় মাত্র ১১ বছর ৬ মাস বয়সী এক শিশু কন্যার সঙ্গে ৩০ বছর বয়সী এক পুরুষের বাল্যবিবাহের আয়োজনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খায়রুল ইসলামের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে শিশুটি।
ভুক্তভোগী ফাতেমার মা রুমিনা (৩৫) জানান, তার স্বামী ইব্রাহিম দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তিনি বাবার বাড়ি, সল্লা ইউনিয়নের নরদহি গ্রামে বসবাস করছেন। এদিকে শিশু ফাতেমা ছিল ইব্রাহিমের দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদার তত্ত্বাবধানে। ইব্রাহিম বর্তমানে প্রবাসে আছেন।
রুমিনার অভিযোগ, সৎ মা শাহিদার পরিকল্পনায় ফাতেমার বিয়ে ঠিক করা হয় কালিহাতীর দশকিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে সোহেলের (৩০) সঙ্গে, যিনি একাধিকবার বিবাহিত। বৃহস্পতিবার রাতে ফাতেমাকে গোপনে সোহেলের বাড়িতে পাঠানো হয়, আর শুক্রবার (২০ জুন) সকালে বিয়ের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়।
খবর পেয়ে রুমিনা দ্রুত ছুটে যান সেখানে। কিন্তু মেয়েকে রক্ষা করতে গেলে সোহেল, তার বাবা ও আরও কয়েকজন তাকে মারধর করে ও গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর তিনি কালিহাতী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ইউএনও খায়রুল ইসলাম বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন। তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজ্জাককে শিশুটিকে উদ্ধারের দায়িত্ব দেন। রাজ্জাকের সাহসিকতায় ফাতেমাকে উদ্ধার করে নিজ জিম্মায় নেওয়া হয়। পরে থানার এএসআই সোহেল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গিয়ে ফাতেমাকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন।
এএসআই সোহেল ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজ্জাক জানান, ইউএনওর নেতৃত্বে সময়োচিত অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধারকৃত কন্যাশিশুটি প্রথমে সৎ মা শাহিদার কাছেই থাকতে চায় বলে জানায়। পরে উভয় মায়ের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, মেয়েটিকে ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেওয়া হবে না। এই মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কালিহাতী শাখার সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক শাহ্ আলম, কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কালিহাতী শাখার দপ্তর সম্পাদক সাংবাদিক শুভ্র মজুমদার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
এক প্রতিবেশী বলেন, সোহেল আগেও একাধিক বিয়ে করেছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে তারা সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
প্রশাসনের সক্রিয়তা ও এক মায়ের সাহসিকতায় শেষ পর্যন্ত একটি নিষ্পাপ জীবন বাল্যবিবাহের করাল থাবা থেকে রক্ষা পেল।
গৌরাঙ্গ বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিনিধি
০১৭১২৭২০৭৮৭