মোঃ আমিরুল হক,রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীতে প্রতিনিয়তই বৈধ দোকানের অবৈধ দেশী মদ ধরা পড়লেও মুল অপরাধীরা থাকছে ধরা ছোড়ার বাইরে। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক। প্রশাসন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের আটক করলেও ধরা ছোয়ার বাইরে থাকছে রাঘব বোয়ালরা।
রবিবার (২২ জুন) দুপুর সোয়া ১২ টার সময় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়ালন্দঘাট থানার নতুন ব্রীজ এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ২৬ হাজার টাকা মূল্যের ৫২ লিটার দেশীয় তৈরি চোলাইমদসহ গ্রেপ্তার করে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস সরদারের ছেলে মোঃ বাচ্চু সরদার (৪৩), দক্ষিণ দৌলতদিয়া গ্রামের মৃত হাসেম সরদারের ছেলে মোঃ লিটন সরদার (৩৮)।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১০ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার শামীম হাসান সরদার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। তারা বেশ কিছুদিন যাবৎ অবৈধভাবে দেশীয় তৈরি চোলাইমদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে গোয়ালন্দ ঘাট সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদেরকে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দে লাইসেন্সধারী মদের ব্যবসায়ী রনজিৎ সরকার ও শুক্লা সরকার। রাজবাড়ীতে এক হাজার ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪২৮ টি মদ সেবীর লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্স প্রতি সাড়ে ৯ লিটার মদ সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে। সকাল ১০ থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে দোকান খোলার কথা। তবে ভোরে যে মদ গোপনে বিক্রি করা হয়, সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দে দেশী মদের দোকানে নিত্যপণ্যের মতো বিক্রি হয় মদ। আর ওই মদের দোকানে ভোর থেকেই মদ কিনতে লম্বা লাইন তৈরি হয় নিয়মিত। অবৈধভাবে মদ পাচারের সময় মাঝে মধ্যেই পুলিশ, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের অভিযানে ইজিবাইক, রিক্সা চালকসহ বহনকারীরা গ্রেপ্তার হলেও আসল অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন এলাকা, গোয়ালন্দ আড়ৎপট্টি, দৌলতদিয়া পোড়াভিটা, দৌলতদিয়া হেলিপোর্ট, দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী, লঞ্চঘাট, মজিদ শেখের পাড়া সহ ভ্রাম্যমান মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা রয়েছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। যে কারণে প্রশাসন অভিযান চালালেই মরণ ঘাতি ইয়াবা, গাঁজাসহ গ্রেপ্তার হচ্ছে মাদক কারবারিরা। এসব মাদক কারবারিদের থেকে সমাজের বৃত্তবান, প্রভাবশালী মর্যাদাশীল পেশাকে কলঙ্কিত করা এক শ্রেণীর নিকৃষ্ট মানুষ মাসোহারা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ থেকে যারা মদ কিনে নিচ্ছে তাদের অনেকের দেশী মদ খাওয়ার লাইসেন্স নেই। কিন্তু প্রতিদিন মদ কেনেন। কোন রকম বাঁধা বিঘ্ন ছাড়াই তারা মদ কেনেন এবং তা দিয়ে নেশা করে মাতলামি করেন। লাইসেন্সধারী মানুষের কাছে ছাড়া এ মদ বিক্রি করা নিষেধ থাকলেও রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ দেশি মদের দোকানে লাইসেন্সধারী ছাড়াই নেশাখোরদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে মদ। এতে এলাকার কিশোর থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ মাদকের নেশায় আসক্ত হচ্ছে। শুধু রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ নয় আশ পাশের থানা এলাকার মাতালরা মদের দোকানে গিয়ে মদ ক্রয় করে খেয়ে মাতাল অবস্থায় মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। এতে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। মদ্যপান করে এলাকার উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকেরা বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। পাশেই দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থাকার কারণে অনেকেই মদ পান করে পতিতাপল্লীতে প্রবেশ করে মাতলামী করে। মাঝে মাঝেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয়দের দাবি, অতি দ্রুত লাইসেন্স’র আড়ালে এ অবৈধ কারবার বন্ধ না করলে দিন দিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়বে গোয়ালন্দ এলাকার যুব সমাজ।
দৌলতদিয়া পোড়াভিটায় প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হয়। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে ২-১ জনকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় শুরু করে মাদক কেনাবেচা।
রাজবাড়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে প্রায় ১ হাজার ও গোয়ালন্দে ৪২৮জন লাইসেন্সধারী মাদক সেবী রয়েছেন। এরমধ্যে সমাজের অনেক নামী-দামী ব্যক্তি রয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, অবৈধভাবে কারা এ মদ কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল, এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। দেশী মদের দোকানে যদি নিয়মের বাইরে কিছু হয় তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রাকিবুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।