নুরুল আবছার নূরী
নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার, মসজিদ-মাজারে হামলার বিচার, সামাজিক অস্থিরতা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণসহ ১৩ দফা দাবিতে আগামী ১৫ নভেম্বর লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে বিশাল জনসভাকে
সর্বাত্মক সফল করার আহবান
বৃহত্তর সুন্নী জোট – চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে আগামী ১৫ নভেম্বর শনিবার দুপুর ২টায় ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠেয় জনসভা উপলক্ষে আজ ১২ নভেম্বর ২০২৫ বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জনসভা প্রস্তুতিমূলক কমিটির আহবায়ক মাওলানা আবদুন নবী আল কাদেরী। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন ভূইয়া,অধ্যাপক মীর আব্দুর রহীম মুনিরী এইচ, এম মুজিবুল হক শাকুর,আলী হোসাইন, মাওলানা এম ওয়াহেদ মুরাদ। লিখিত বক্তব্যে মাওলানা আব্দুন নবী বলেন- জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতার পট পরির্বতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট রাষ্ট্রীয় সার্বিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে থাকলেও আজ অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, মব ভায়োলেন্স, মসজিদ-মাজারে আক্রমণ, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়া ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে জনগণ হতাশ হয়েছে। তিনি বলেন – ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষিত হওয়ায় জনগন একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশায় আশান্বিত হয়েছিল। কারণ- পতিত সরকারের অধীনে জনগন তিনটি জাতীয় নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি। কাঙ্খিত রোডম্যাপ ঘোষণার পর থেকে রাজনীতির মাঠে দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন কেন্দ্রীক ঐক্যমত্যের পরিবর্তে বিদ্যমান সাংবিধানিক নির্বাচনী ব্যবস্থা পি. আর. পদ্ধতি, গনভোটসহ নানা প্রশ্নে চরম বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।নেতৃবৃন্দ বলেন- অন্তবর্তীকালীন সরকারের ১৫ মাসে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে আতংক সৃষ্টি করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের, মসজিদে ইমামদের হেনস্তা ও পদত্যাগে বাধ্য করা, কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে উল্লাস করা, শতশত মাজার, মসজিদ ও মাদ্রাসায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও প্রকাশ্যে লুটপাটের ঘটনায় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা জাতি গভীর উদ্বেগের সাথে প্রত্যক্ষ করেছে। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক, গত ১৫ মাসে নতুন করে ১ লক্ষ ৬০ হাজার উচ্চ শিক্ষিত যুবক-যুবতী বেকার হয়েছে। ৩৫৩ টি শিল্প কারখানা বন্ধের কারনে বেকার হয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার শ্রমিক মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট মতে গত চার মাসে ৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিবর্তে চলছে ছাটায়ের খড়গ, সকল কারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমদানী-রপ্তানী থমকে যাচ্ছে । দেশ পরিচালনায় বাড়ছে ঋণের বোঝা, বাড়তি মূল্যস্ফীতি দারিদ্র জনগোষ্ঠির পেটে আঘাত করছে। তদুপরি মামলা বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির মধ্যে ও ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী একটি অবাধ শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাশা করেছিল শান্তিপ্রিয় জনগণ। কিন্তু জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক অংশিজনদের মধ্যে বিভাজন ও নানাবিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে একটি পাতানো নির্বাচনের শংকায় শংকিত জনগন। অতএব সার্বিক রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও অনিশ্চয়তার বৃত্ত থেকে জাতিকে উদ্ধারের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠ শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনার জন্যই বৃহত্তর সুন্নী জোট এর পক্ষ থেকে ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে আগামী ১৫ নভেম্বর শনিবার বিকেল ২টায় ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে । নেতৃবন্দ বলেন আমরা চাই জাতির বিভাজন দূর করে নির্বাচনে নির্ভয়ে নিঃসংশয়ে জনরায়ের প্রতিফলন হোক।
সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর সুন্নী জোট ঘোষিত ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব
মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন ভুইয়া। দাবিগুলো হল
* নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন করা।
* জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোটের আয়োজন করা।
* রাষ্ট্রীয় সংলাপে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
* নির্বাচনের আগে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা।
* দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক ও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
* জুলাই বিপ্লব ও পরবর্তী সময়ে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা।
* পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
* চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
* আরাকান আর্মিকে করিডোর না দেয়া।
* মাজার মসজিদে হামলাকারীদের বিচার ও মাজার, খানকা, দরবার শরীফ ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
* মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ করা।
* গণ-মাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
* নির্বাচনকালীন সময়ে দল নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সংগঠক এ, এম মঈনউদ্দিন চৌধুরী হালিম এবং এম.নাছির উদ্দীন মাহমুদের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা করিম উদ্দিন নুরী, মাওলানা মুজাম্মেল হোসেন, হাজী মুহাম্মদ আলম রাজু, আলমগীর ইসলাম বঈদী, কবি জসিম উদ্দীন মাহমুদ, ডা:হাশমত আলী তাহেরী, ছৈয়দ মিজানুর রহমান, হাবিবুল মোস্তফা ছিদ্দিকী,মুহাম্মদ এনামুল হক, এস.এম. আবু ছাদেক ছিটু, শাহজাদা মঈন উদ্দিন সঞ্জরী, মাওলানা ইসমাইল সিরাজী, মহিউদ্দীন, শাহজাদা সৈয়দ মিজানুর রহমান, ফয়সাল, গিয়াস উদ্দিন কাদেরি,মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বদরুল হুদা তারেক, মোহামন্দ রাশেদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম লিটন, মুহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহজাদা মিজানুর রহমান, মো: মহিউদ্দীন, ডা: মো: রাসেল, তকদীর হোসেন, মাওলানা ইসমাইল সিরাজী, আফতাব উদ্দিন ইমন,সৈয়দ ফয়জুল আবেদীন আরমান,নুর রায়হান চৌধুরি প্রমূখ। এছাড়াও জোটের শরীকদল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও সুপ্রিম পার্টির জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাপশনঃ বৃহত্তর সুন্নী জোট চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মাওলানা আবদুন্নবী আলকাদেরী।

