মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার,কুমিল্লা:
কাটা হাতের অস্ত্রোপচার করছেন চিকিৎসকরা।
নোমান হোসেন নামের এক রোগীর বিচ্ছিন্ন হাত জোড়া লাগিয়ে দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসক টিম।
গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল২০২৫ খ্রিঃ) রাত সাতটা থেকে বারোটা পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হাতটি জোড়া লাগানো হয়।
অস্ত্রোপচার টিমের তত্ত্বাবধানে ছিলেন কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডাঃ কামরুল ইসলাম মামুন, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাইফ মাহমুদ, অ্যানেস্থেসিয়া ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান,
সদস্য হিসেবে ছিলেন,
ডাঃআমির রশিদ সংগীত,
ডাঃ রেদওয়ানুল ইসলাম মাহমুদ,ওটি ইনচার্জ মোঃ জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ‘গত ২৯ এপ্রিল বিকেলে একজন রোগী কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারে ভর্তি হন। রোগীর শরীর থেকে হাত বিচ্ছিন্ন ছিল।রোগীর অবস্থা দেখে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা স্যারকে জানান। এরপর স্যার বিস্তারিত দেখার পর, অপারেশন করার জন্য বলেন। ওই দিন রাতেই সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
ওটি ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিচ্ছিন্ন একটা হাত জোড়া লাগানোর টিমে কাজ করেছি। স্যার আমাকে রেখেছেন এ জন্য স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এখন রোগীর অবস্থা উন্নতির দিকে।’
টিম প্রধান ডাঃ মামুন বলেন, ‘একজন মানুষের হাত আছে, আরেকজন মানুষের হাত নেই। এতে পার্থক্য করলেই বোঝা যায়। মানুষের একটি আঙ্গুল নষ্ট হলেও আমাদের কাছে অনেকে লজ্জায় কাপড় পেচিয়ে আসেন। হাত মানুষের শারীরিক একটি সৌন্দর্য। হাত ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যে যে আনন্দ, তা বোঝানো যাবে না।’‘মানুষের হাত যদি না থাকে, ইলেকট্রিক হাত লাগান। তাতে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। সেই হাতও স্বাভাবিক হাতের মত বেশি কাজ করবে না। নিজের হাতের অনুভূতিই আলাদা রকম। এই হাত রিপ্লেস করতে পেরে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। রোগীর অবস্থা উন্নতি দিকে। হাতটি স্থায়ী হয়ে গেলে ভালো লাগবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা মানুষের হাত কেটে গেলে জোড়া লাগানোর বিষয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। কাটা হাত সঠিকভাবে না নিয়ে আসার কারণে অনেক হাতের সাফল্যজনক অপারেশন করা যায় না। হাত সংযুক্ত করতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে হবে। আর না হয়, অপারেশনের পর টিকার সম্ভাবনা কম, হাত লাগাতে নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হয়।’একাজগুলো করার জন্য নিবেদিত একটা টিম প্রয়োজন। আর এজন্য মানুষের সচেতনা খুব জরুরি। কাটা হাতটি সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ে আসা খুব জরুরি। হাতে পানি লাগিয়ে নিয়ে চলে আসলে, এটি কাজে লাগানোর সম্ভাবনা খুবই কম। হাতটি পরিষ্কার করে পলিথিনে নিতে হবে। আরেকটি পলিথিতে বরফ দিতে হবে, বরফ লাগানো পলিথিনের মধ্যে কাটা হাতটি রাখা পলিথিনটি রাখতে হবে। এভাবে কাটা হাতটি যদি সঠিকভাবে ফ্রিজ আপ করা হয়। অনেক সময় এ হাত ছয় থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে।’ ‘জোড়া লাগানো হাত ভালো হওয়ার পর, হাত দিয়ে দৈনন্দিন সব কাজ করা সম্ভব। রোগী প্রথমে খুবই চিন্তার মধ্যে ছিল, হাত ভালো হবে কি হবে না। এর আগে সফলভাবে একটি হাত লাগানোর গল্প আছে, তখন আমাদের উপর নির্ভর হয়েছেন। টিমের সদস্যরা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।’ মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫ খ্রিঃ ফলোআপে রোগী আমাদের কাছে এসেছে।