ঢাকাশুক্রবার , ১৬ মে ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জনপ্রিয় সংবাদ
  9. জাতীয়
  10. বিনোদন
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধির দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসকরা ব্যস্ত ব্যক্তিগত চেম্বারে

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
মে ১৬, ২০২৫ ৯:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

রাজবাড়ী জেলা সদরের নির্মিত ১০০ শয্যার আধুনিককৃত সদর হাসপাতাল। এখানে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করে আড়াইশ শয্যায় রূপান্তরের বিষয়টি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন। তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংকটে দীর্ঘদিনের সমস্যা। এক সময়ের জরুরি ও বহিঃবিভাগের রোগীর চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন একজন মেডিকেল অফিসার ও সহযোগী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ম্যাটসের শিক্ষার্থী। এখন সেই দায়িত্বে তদারকি করছেন ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি (রিপ্রেসেন্টেটিভ)। এদিকে, হাসপাতালের চেয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে ও নিজের মালিকানাধীন ডায়াগণস্টিক সেন্টার-ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দুর্ণীতি দমন কমিশন দুদকের অভিযানে চিকিৎসক অনুউপস্থিতি সহ নানা অনিয়মের সত্যতা মিলেছে।

সরেজমিন রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহিঃবিভাগের ১১০ নং কক্ষে রোগী দেখছেন ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী এক যুবক। ওই যুবক একটি হারবাল ঔষধ জাতীয় কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি।  আবার অনেক ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদেরকে তাদের ঔষধের সীল মারতে দেখা গেছে। হাসপাতালে ওই দিনে রোস্টার অনুযায়ী বহিঃবিভাগে ১১০ নং কক্ষের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সিফাত মাহমুদ। তার সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব ছিলেন দুইজন ম্যাটসের শিক্ষার্থী কিন্তু এরপরও হারবাল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিকে দিয়ে চিকিৎসা প্রদানের কারণ জানতে চাইলে ডাঃ সিফাত মাহমুদ দায়িত্বহীনতার দায় অকপটে স্বীকার করে বলেন, রোগীদের বাড়তি চাপ থাকায় সুযোগ দিয়েছি, এটা ভূল হয়েছে ।

অভিযোগ রয়েছে, ডা. সিফাত মাহমুদ হাসপাতালে সরকারি কর্তব্য ফেলে রেখে ট্রেডলাইসেন্স দিয়ে গড়ে উঠা মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ব্যস্ত থাকেন।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী, ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি রিপ্রেসেন্টিভদের সরাসরি ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না থাকলেও হর হামেশাই রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে তাদেরকে ডাক্তারের পাশে বসেই চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা যায়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের রুমে ডা. আশরাফের ডিউটি চলাকালীন সময়ে দেখা যায় রাজবাড়ীতে ফারিয়ার সভাপতি মিঠু ও তার একজন সহযোগী তাদের কোম্পানির নাম সহ ছিল এগিয়ে দিচ্ছেন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসককে নিজেদের ঔষধ লেখার সুপারিশ করছেন। পাশাপাশি ডাক্তারের নাম্বার নিজেদের মোবাইল ফোনে সেভ করে রাখছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে এক কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন,  বহিঃবিভাগে ও ইমারজেন্সিতে প্রায়শই চিকিৎসা পত্র দেন ঔষধ কোম্পানির বিভিন্ন প্রতিনিধিরা। এতে সাধারণ রোগীরা ভুল চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা ও লাভ হচ্ছে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের। এ কারণে প্রতিদিন জরুরী বিভাগে কর্মরতদেরকে সকাল, দুপুর ও রাতে খাবার সরবরাহ করে ফারিয়ার প্রতিনিধিরা।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আফিফা বলেন, ইতিপূর্বেই বহিঃবিভাগ থেকে ঔষধ কোম্পানির বিভিন্ন বিক্রয় প্রতিনিধিকে চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা গেলে তাদেরকে সেখান থেকে সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমানে তাদেরকে আর হাসপাতালে দেখা যায় না। পরবর্তী সময়ে আবারও দেখা গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুর্ণীতি দমন কমিশন ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাশার বলেন, বৃহষ্পতিবার (১৫ মে )  দুপুরে হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে রোগীদের জন্য ২২ কেজি ২০০ গ্রাম মুরগীর মাংসের পরিবর্তে ১৫ কেজি ২০০ গ্রাম মাংস রয়েছে, অর্থাৎ ৭ কেজি মাংস কম। খাবারের লিস্টে প্রতিদিন রোগীদের ৩৫০ গ্রাম করে ২বার অর্থাৎ ৭০০গ্রাম করে দুধ দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতাল থেকে রোগীদের দুধ দেয়া হয় না। শুক্রবারে খাসির মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র বিশেষ দিনে দেয়া হয়। হিসাব রক্ষক না থাকায় পোশাক ধোলাই টেন্ডারের রেকর্ডপত্র পাইনি। কয়েকজন চিকিৎসক অনুপস্থিত রয়েছে আমরা দেখতে পেয়েছি। আমরা সরেজমিনে যা সত্যতা পেয়েছি এবং কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করব। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোঃ জিয়াউল আহসান বলেন, দুদকের বিশেষ টিম সদর হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযানে রান্না ঘরের ডায়েটে ৭ কেজি মাংস কম পেয়েছে ও চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি দেখতে পেয়েছে। এছাড়াও তারা পথ্য ও লিলেন টেন্ডারের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য চেয়েছিল, কিন্তু  হিসাবরক্ষক ছুটিতে থাকায় আমি সেটা দিতে পারিনি। আমি সামনের শনিবারের মধ্যেই এটা তাদের পাঠিয়ে দেব। তারা বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে কমিশনকে জানাবে। এছাড়াও আমরা চেষ্টা করবো আমাদের যে অনিয়ম আছে তা দূর করার জন্য।

উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। সেই অভিযানে খাবারের নিম্নমান, রোগীদের খাবার কম দেওয়ার সত্যতা পেয়েছিলেন দুদকের প্রতিনিধি দল।