মোঃ জাহিদ হোসেন জিমু
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধা জেলা সদরের একমাত্র সরকারি জেনারেল হাসপাতাল এখন নিজেই নানান রোগে আক্রান্ত—স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায়। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ঔষধ ও এমএসআর সামগ্রী ক্রয় না করায় হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। প্রাণরক্ষাকারী ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতিতে রোগীরা যেমন চরম বিপাকে, তেমনি ডাক্তারদের দায়িত্বহীনতায় বেড়েছে জনদুর্ভোগ।
সরকার প্রতি বছর প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দিলেও রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন। গত ১৫ জুন ২০২৫ রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, আউটডোরে শত শত রোগী প্রচণ্ড গরমে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছেন। দেখা মেলে না চিকিৎসকের; আর দেখা পেলেও ৩-৪ ঘণ্টা পর মেলে সামান্য কয়েকটি ট্যাবলেট।
ইনডোরের চিত্রও ভিন্ন নয়। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড মিলিয়ে ৩-৪ শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন, কিন্তু চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে তারা এবং তাদের স্বজনেরা চরম হতাশ। এক স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিনামূল্যে ভালো চিকিৎসার আশায় রোগী ভর্তি করেছিলাম। অথচ ফ্যানের বাতাস ছাড়া হাসপাতাল থেকে আর কিছুই মিলছে না। ঔষধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে, তাও অনেক বেশি দামে।”
কামারজার্নির সাজিদা (শ্বাসকষ্ট), বাগুড়িয়ার মমেনা (রক্তশূন্যতা), ঘাঘোয়ার শামিম (ডেঙ্গু) এবং ডেভিড কোম্পানিপাড়ার হারুন-অর-রশিদ (পেটের ব্যথা)—এরা সকলেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রয়েছেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আশায়। কিন্তু তাদের ভাষায়, দিনে একবার ডাক্তার এলেও রোগ উপশমের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে জীবনরক্ষাকারী ঔষধ।
তত্ত্বাবধায়কের বক্তব্য
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুজ্জামান জানান, “আমার দেখা তালিকা অনুযায়ী পুরো জুন মাসের জন্য ঔষধের মজুত আছে। তবে অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণেই এই সংকট দেখা দিচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমার দায়িত্ব নেওয়ার পর এমএসআর টেন্ডার সংক্রান্ত বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। সে কারণেই টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত ছিল। আশা করছি আগামী জুলাই মাসে ইডিসিএল থেকে ঔষধ সরবরাহ শুরু হবে।
জনগণ এখন এই সংকটের দ্রুত সমাধান ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রত্যাশায় রয়েছে।