ঢাকারবিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জনপ্রিয় সংবাদ
  9. জাতীয়
  10. বিনোদন
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভুজপুর থানার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দাপটে পাহাড় কেটে পুকুর ভরাট

Link Copied!

নুরুল আবছার নূরী

চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ভুজপুর থানার হারুয়ালছড়িতে বিশাল এক পাহাড় কেটে ইউপি ভবন সম্প্রসারণের নামে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। পরিবেশ আইনকে তোয়াক্কা না করে এসব অপকর্ম করে চলেছে হারুয়ালছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী নিজেই। আইন লঙ্ঘন করে পুকুরটি ভরাট করার ফলে এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এলাকাটি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরীর দাবী তিনি পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করছেন না। তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব পাহাড় কাটা হচ্ছে। ইউপি ভবন সম্প্রসারণ করার জন্য পুকুর ভরাট হচ্ছে। এলাকার উন্নয়ন কাজের জন্য পাহাড় কাটা কোন অপরাধ নয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কে নলেজে দিয়েছি।’

অথচ, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৪ (১) ধারা অনুযায়ী, পরিবেশ বিধ্বংসী যেকোন কর্মকান্ড ও টিলা পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। একইভাবে পানির উৎস জলাধার-পুকুর ভরাটও নিষিদ্ধ। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রশাসনের কোন অনুমোদন ছাড়াই রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে পুকুর ভরাট করলেও চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ভুজপুর থানার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজার পশ্চিমে, পেলাগাজি-বারৈয়ারঢালা সড়কের ডান পাশে ৩০০ ফুট গেলেই বিশাল এক পাহাড়। সেখানে এক্সকেভেটর ব্যবহার করে শ্রমিক দিয়ে নির্বিচারে পাহাড়টি চেয়ারম্যনের নির্দেশে কাটা হচ্ছে। স্থানীয় মাটি খেকো বদি সওদাগর এর নেতৃত্বে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে পাহাড়টি কেটে অনেকাংশে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। অনুমতি ছাড়াই ইউপি ভবন সম্প্রসারণের কাজে পুকুরে ভরাটের অজুহাতে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানতে চাইলে মাটিখেকো বদি সওদাগর সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন। একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, “চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলুন।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, আ.লীগ সরকার পতনের পর চেয়ারম্যান ইকবাল চৌধুরী এলাকায় খুবই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সবকিছুই তিনি করছেন। ইউপি ভবন বানাতে ভরাট হচ্ছে বিশাল এক পুকুর। এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করে কাটা হচ্ছে পাহাড়। আইনের কোনো তোয়াক্কা করছেননা তিনি।

মো. নাজিম উদ্দিন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশে এসব মাঠি কাটা হচ্ছে। তিনি এখানে কয়েকজন মাঠিয়াল ঠিক করেছেন। দৈনিক কামলা হিসেবে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে কাজ করছি। দিন শেষে সবাই পারিশ্রমিকও নিচ্ছি।’

পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করে
উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এম এস আকাশ বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পুকুর পানি-নিষ্কাশন ও অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় গুরুত্ব রাখে। ভরাটে পানির উৎস নষ্ট হওয়ায় অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলাও দুঃসাধ্য হয়।’ তিনি বলেন, ‘পুকুর বা জলাধার বেশি থাকলে আর্দ্রতা বেশি থাকবে। ফলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রিত এবং এলাকার তাপমাত্রা কম থাকবে।’ তিনি দাবী করেন, পুকুর অপরিহার্য প্রয়োজন ছাড়া ও কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভরাট করা যায় না। ভরাট-শ্রেণি পরিবর্তন আইনের পরিপন্থি ও শাস্থিযোগ্য অপরাধ।’

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড় কাটা এবং পুকুর ভরাটের বিষয়টি জানি না। এমনটি হলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সরেজমিন দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য অধিদফতরের কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানিনা। যে কোন স্থানে পাহাড় কাটার কোনো নিয়ম নেই। পাহাড় কাটা আইনগত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুকুর ভরাটও নিষিদ্ধ। বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকেই শুনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’